এপ আপডেট করা হয়েছে এবং নতুন কন্টেন্ট যুক্ত করা হয়েছে
গ্রিক পুরাণ প্রাচীন গ্রীসে রচিত সেদেশের দেবদেবী ও বীর যোদ্ধাদের কাহিনীসম্বলিত পুরাণকথা ও কিংবদন্তি সংক্রান্ত আখ্যানমালা। এই গল্পগুলিতে বিশ্বপ্রকৃতি এবং গ্রিকদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও প্রথা ও রীতিনীতির উদ্ভব ও গুরুত্বও ব্যাখ্যাত হয়েছে। এগুলি প্রাচীন গ্রিসের ধর্মীয় সংস্কৃতির অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত হয়। আধুনিক বিশেষজ্ঞগণ এই সকল পুরাণকথা অধ্যয়ন করে প্রাচীন গ্রিসের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পুরাণ-রচনার প্রকৃতিটি বুঝবারও চেষ্টা করে থাকেন।
গ্রিক পুরাণের রূপায়ণ ঘটেছে মুখ্যত এক সুবিশাল উপাখ্যান-সংগ্রহে এবং গৌণত বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বমূলক শিল্পকলা, যেমন পাত্র-চিত্রকলা বা পূজাপহার ইত্যাদিতে। গ্রিক পুরাণে উল্লিখিত হয়েছে বিশ্বের সৃজন এবং বহু দেবদেবী, যোদ্ধা, নায়িকা ও অপরাপর পৌরাণিক জীবের বিস্তারিত বিবরণী। একটি মৌখিক কাব্যপ্রথায় এই কাহিনীগুলির বীজ উপ্ত হয়েছিল। আজকের পরিচিত গ্রিক পুরাণকথাগুলি পাওয়া যায় প্রধানত গ্রিক সাহিত্যে। গ্রিসের প্রাচীনতম সাহিত্য উপাদান ইলিয়াড ও ওডিসি গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে ট্রয় যুদ্ধ ও তার পারিপার্শ্বিক ঘটনাগুলি। হোমার রচিত এই গ্রন্থদুটি হেসিয়ডের থিওগনি ও ওয়ার্কস অ্যান্ড ডেজ গ্রন্থের সমসাময়িক; যেগুলির বিষয়বস্তু হল জগতের সৃষ্টিতত্ত্ব, দৈবী শাসকদের আবির্ভাব, মানবীয় যুগগুলির পারম্পার্য, মানুষের দুঃখের সূত্রপাত এবং বলিপ্রথাগুলির উদ্ভব। এছাড়াও এই পুরাণকথাগুলি সংরক্ষিত হয়েছে হোমারীয় স্তোত্রাবলিতে, মহাকাব্য-চক্র বা এপিক সাইকেলের মহাকাব্যিক কবিতাবলিতে, গীতিকবিতায়, খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের ট্রাজেডিয়ানদের রচনাবলিতে, হেলেনীয় যুগের পণ্ডিত ও কবিদের রচনায় এবং প্লুটার্ক বা পসানিয়াসের মতো রোমান সাম্রাজ্যের সমসাময়িক লেখকবৃন্দের রচনায়। বহু পুরাসামগ্রীর অলংকরণে দেবতা ও যোদ্ধাদের চিত্রাঙ্কণ করা হত বলে পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণও গ্রিক পুরাণ ব্যাখ্যানের অন্যতম প্রধান উপাদান। খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর পাত্রগুলিতে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশার সাহায্যে ট্রয় চক্র বা ট্রোজান সাইকেল তথা হেরাক্লিসের অভিযানসমূহের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। পরবর্তীকালে প্রাচীন, ধ্রুপদী ও হেলেনীয় যুগগুলিতে হোমারীয় ও অন্যান্য পৌরাণিক দৃশ্যকলা সমকালে বিদ্যমান সাহিত্যিক প্রমাণের নিদর্শনস্বরূপ।
গ্রিক পুরাণ শুধুমাত্র পাশ্চাত্য সভ্যতার কৃষ্টি, শিল্প ও সংস্কৃতিতেই গভীর প্রভাব বিস্তার করেনি, বরং পশ্চিমি ঐতিহ্য ও ভাষার একটি অংশ হিসাবে বিরাজমান হয়েছে। সুপ্রাচীন কাল থেকে অদ্যাবধি কবি ও শিল্পীগণ গ্রিক পুরাণ থেকে অনুপ্রেরিত হয়ে এসেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন ধ্রুপদী পৌরাণিক বিষয়বস্তুর সমসাময়িক গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা।