توضیحات:
প্রতি অর্থ বছর শেষে যে আয়কর আপনাকে দিতে হচ্ছে বাংলাদেশে অনেকেই আছেন বেশ দক্ষতার সাথে সেটি সামাল দেন। কিন্তু বহু মানুষ আছেন যারা রীতিমতো হিমসিম খান। তথ্যের অভাবে ভুল করে থাকেন, নানা ঝামেলায় পরেন। যারা নতুন আয়কর দিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রেই এটি বেশি হয়ে থাকে।
Feature
1. Income Tax Ordinance, 1984
2. Income Tax Rules, 1984
3. Others Tax Related Act
আয়করের আওতায় কে পরেন
আয়কর সম্পর্কে প্রথম যেটি জানতে হবে সেটি হল তার আয় কত, আর সেটি আয়করের আওতায় পরে কিনা। ইনকাম ট্যাক্স আইন অনুযায়ী সাত ধরনের আয় করের আওতায় পরে। যেমন চাকরী থেকে পাওয়া বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়িভাড়া থেকে আয়, কোন সম্পত্তি বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ, জামানতের সুদ (সঞ্চয়পত্র, বন্ড, ব্যাংকের সুদ ইত্যাদি), কৃষি আয় ইত্যাদি।
কত আয় হলে কর দিতে হয়
আপনি যদি পুরুষ হন আর আপনার বাৎসরিক আয় যদি আড়াই লাখ হয় তবে সেই পর্যন্ত আপনার কোন আয়কর নেই। তবে আয় এর উপরে চলে গেলেই আপনি আয়করের আওতায় পরবেন। আর নারীদের জন্য বাৎসরিক তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কর মওকুফ। কিন্তু তার উপরে গেলেই তিনি করের আওতায় পরবেন। নারী পুরুষ হিসেবে আপনার প্রথম আড়াই লাখ বা তিন লাখ টাকা বাদ দিয়ে পরবর্তী চার লাখ টাকার জন্য দশ শতাংশ কর হবে। আয় যত করের হার তত বাড়তে থাকবে।
কিভাবে কর দেবেন
প্রথমে আপনাকে একটা টিন নম্বর অথবা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নিতে হবে। আপনি টিন নম্বর পাওয়া মানে আপনি আয়কর বিষয়ক নিজের একটি পরিচয় তৈরি করলেন। আয়করের আওতায় পরলে কর কত হচ্ছে তা বাৎসরিক আয় অনুযায়ী হিসেব করুন। হিসেবে যা আসে সেটি আপনি সরকারকে দেবেন। আপনি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকাটি জমা দিতে পারেন অথবা সরাসরি আপনি যে কর অঞ্চলের ডেপুটি কমিশনার ট্যাক্সেজ কর্মকর্তা বরাবর পে অর্ডার করে কর দিতে পারেন।
আয়কর রিটার্ন কি
প্রতি বছর ৩০ শে নভেম্বরের মধ্যে আপনাকে ট্যাক্স রিটার্ন দিতে হবে। প্রতি অর্থ বছরে এই সময়ের মধ্যে একটি ফর্মে আপনার আয়, সম্পত্তি, আয়কর ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য হালনাগাদ করা। কেননা আপনার এ সম্পর্কিত তথ্য প্রতি বছর বদলে যেতে পারে। একবার টিন নম্বর নিয়ে নিলে সরকারকে জানিয়ে দিতে হবে আপনার বর্তমান অবস্থান। ট্যাক্স রিটার্ন না দিলে শাস্তির ব্যবস্থাও আছে।
কোন ক্ষেত্রে করে ছাড়ের সুবিধা পাবেন
আপনার যদি বিভিন্ন মেয়াদে সরকারি সঞ্চয়পত্র কেনা থাকে, শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করা থাকে, জীবন বীমা করা থাকে এরকম কিছু ক্ষেত্রে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে কর মওকুফের সুবিধা পাবেন। এক্ষেত্রে আয়কর আইনজীবীরা বলেন, সরকারি সঞ্চয়পত্র কিনে রাখাই সবচেয়ে ভালো। সঞ্চয়পত্রকে সবচাইতে ঝুঁকিমুক্ত মনে করা হয়।
অভিযোগ থাকলে কোথায় যাবেন
আপনি যদি মনে করেন কর দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার সাথে কোন অন্যায় হয়েছে সেক্ষেত্রে আপনার অভিযোগ জানানোর জায়গা আছে। সেক্ষেত্রে প্রথম করনীয় হচ্ছে কমিশনার অফ ট্যাক্সেজ আর কাছে আপিল করা। আপনার অভিযোগের ভিত্তিগুলো বিস্তারিত জানিয়ে লিখিতভাবে আপিল করতে হবে। তিনি শুনানির জন্য সময় দেবেন। তাকে যদি সেখানে যুক্তিতর্ক দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হন তাহলে সেখানেই আপনার সমস্যার সমাধান হতে পারে। তিনি যদি আপনার বিপক্ষে রায় দেন সেক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে দ্বিতীয় আপিল করা যায়। ট্রাইব্যুনালে গিয়েও যদি আপনি হেরে যান তাহলে হাইকোর্টে গিয়েও আপনি সর্বশেষ আরেকবার আপিল করতে পারবেন।
আয়কর সংক্রান্ত কতিপয় জ্ঞ্যাতব্য বিষয়
১. আয়কর রিটার্ণ, সম্পদ ও দায় বিবরণী এবং জীবন-যাত্রার মান সম্পর্কিত তথ্য ছকে সঠিক তথ্য প্রদান করে ঘোষিত আয়ের ভিত্তিতে কর পরিশোধ করা প্রত্যেক করদাতার নাগরিক দায়িত্ব।
২. প্রদর্শিত আয়ের স্বপক্ষে হিসাবের খাতাপত্র এবং তথ্য প্রমাণ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
৩. আয়কর রিটার্ণ প্রস্তুত এবং তা দাখিলের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক।
৪. জরিমানা পরিহারের জন্য বিধিবদ্ধ সময়সীমার মধ্যে তথ্য প্রমাণসহ আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাঞ্ছনীয়।
৫. সম্ভাব্য সরল সুদ পরিহারকল্পে যথাসময়ে অগ্রিম করের কিস্তি পরিশোধ করা আবশ্যক।
৬.উৎসে কর কর্তনকারী সকল কর্তৃপক্ষের জন্য কর্তনকৃত/ সংগৃহিত কর বিধিসম্মত সময়সীমার মধ্যে সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান পূর্বক কর বিভাগে তথ্য প্রেরণ করা আবশ্যক।
৭.সম্ভাব্য জটিলতা পরিহারকল্পে আয়ের কোনো উৎস হতে আয়কর কর্তন করা হলে তার তথ্যাবলী সংগ্রহ করে রাখা আবশ্যক।
৮. কর নির্ধারণী আদেশের বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকলে আদেশ প্রাপ্তির ৪৫ দিনের মধ্যে আপীল দায়ের এবং আপীল আদেশ প্রাপ্তির ৬০ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে হবে।
৯. কর অফিসের নোটিশ বা পত্র পেলে অবহেলা না করে তার জবাব প্রদান করা বাঞ্ছনীয়।
১০। অফিস আদেশ